হাওজা নিউজ এজেন্সি: কোমে সেন্টার ফর স্টাডিজ অ্যান্ড রেসপন্স টু ডাউটস-এ কুরআনভিত্তিক নগর জীবন বিষয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ রেজা ইমাদি বলেন, ইসলামী উৎসে পরিবেশ কেবল প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং ঈশ্বরীয় দায়িত্ব (আমানত) হিসেবে বিবেচিত। তিনি বলেন, সরকার এবং নাগরিক—উভয়েরই দায়িত্ব বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশ রক্ষা করা। “ইমাম সাদিক (আ.) শিক্ষা দিয়েছেন, ‘তিনটি জিনিস ছাড়া জীবন সুখকর নয়: পরিষ্কার বায়ু, প্রচুর বিশুদ্ধ পানি, এবং উর্বর মাটি।’ কয়েক শতাব্দী আগের এই শিক্ষা দেখায় যে পরিবেশগত ন্যায়বিচার সর্বদা ইসলামী চিন্তাধারার অংশ ছিল।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে কুরআন “বিশুদ্ধ ভূমি” হিসেবে এমন জায়গাকে চিহ্নিত করেছে যেখানে পরিষ্কার বায়ু এবং স্বাস্থ্যকর মাটি বিদ্যমান। তিনি বলেন, “দূষিত আকাশের অধীনে কোনো বিশুদ্ধ শহর কল্পনা করা যায় না।” সূরা আল-আরাফ ও সূরা সাবা-তে সবুজ ও উর্বর পরিবেশকে ঈশ্বরীয় আশীর্বাদের চিহ্ন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসলামী আইন ও নগর জীবনের চ্যালেঞ্জ
স্কলার ব্যাখ্যা করেন, প্রাচীন মুসলিম পণ্ডিতরা নগর এলাকায় ধোঁয়া বা শব্দ সৃষ্টি করা ব্যবসা যেমন লোহার কাজ অনুমোদিত হবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক করতেন। এটি প্রমাণ করে যে, শতাব্দী আগে থেকেই মুসলিম পণ্ডিতরা দূষণ ও জনগণের কল্যাণকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সমসাময়িক আইনজ্ঞরাও একই নীতি অনুসরণ করছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের ইসলামী বিপ্লব নেতা একটি হুকুম জারি করেছেন যেখানে শিল্পখাতকে বাতাস দূষণ রোধে ফিল্টার বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি কেবল আইনগত বিষয় নয়, এটি জনগণের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত।”
ন্যায় ও ভারসাম্য
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাদি বলেন, কুরআনে ন্যায়ের ধারণা সামাজিক দায়িত্বের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বও নির্দেশ করে। কিস্ট (সামাজিক ন্যায়) এবং মিজান (ভারসাম্য) কেবল মানব সম্পর্ক নয়, প্রকৃতি সংরক্ষণেও পথপ্রদর্শক। তিনি বলেন, “বায়ু দূষণ করা বা সম্পদ ধ্বংস করা মানে এই ভারসাম্যকে ভঙ্গ করা।”
নীতি ও নাগরিক দায়িত্ব
তিনি বলেন, সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে পরিষ্কার পানি, মাটি ও বায়ু মৌলিক অধিকার হিসেবে রক্ষা করা হয়। নাগরিকরাও দায়িত্ব ভাগাভাগি করবে—পুনঃব্যবহার, গণপরিবহন ব্যবহার এবং সবুজ এলাকা সংরক্ষণ করে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ইসলাম উন্নতির বিরোধী নয়। তিনি বলেন, “কুরআন মধ্যপন্থার শিক্ষা দেয়—“সর্বোত্তম পথ হলো মধ্যপথ”। একটি আধুনিক শহরও উন্নত এবং ঈশ্বরীয় মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বস্ত হতে পারে, যদি তা মানব মর্যাদা, পরিবেশগত ন্যায় এবং আধ্যাত্মিক ভারসাম্য রক্ষা করে।”
আপনার কমেন্ট